ডিজিটাল মার্কেটিং VS ট্রেডিশনাল মার্কেটিং
চলে এলাম আরো একটি নতুন আয়োজন নিয়ে। আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের পার্থক্যসহ বিভিন্ন উদাহরণভিত্তিক বিশ্লেষণ!
যা আপনাকে পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে একটি সহজ এবং পরিপূর্ণ ধারণা দিতে সাহায্য করবে। চলুন তবে দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক৷
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি?
শুরুতেই ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর সাধারণ কন্সেপ্ট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এতে করে মূল আলোচনা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পরিচালিত বিজনেস এবং মার্কেটিং সিস্টেমকে সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কারণে বিভিন্ন মার্কেটিং টেকনিক দ্রুত বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
গ্রাহকের ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডিভাইসের ঘন ঘন ব্যবহারের কারণে এই ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে রীতিমতো পুরো বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। তাছাড়া ঘরে বসে বাড়তি আয়ের এই উৎস খুঁজে পেয়ে মার্কেটারেরা কিছুতেই তা মিস করার পক্ষে নয়। অনলাইনে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর ভবিষ্যতে বিশ্ব-ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন মোড় সৃষ্টি করবে৷
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কি?
এবার আসি ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের ব্যাপারে। সহজ কথায় ট্রেডিশনাল মার্কেটিং মানেই অফলাইন মার্কেটিং। যা সম্পূর্ণ অনলাইনের বাইরেরই পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে মার্কেটারের ফিজিক্যাল মার্কেটিং বা অফলাইন মার্কেটিংয়ের সাহায্য নিয়ে থাকে। এই ধরণের মার্কেটিংয়ের পাবলিসিটি পলিসিও সংঘটিত হয় অফলাইনে।
একইভাবে এই সেক্টরে গ্রাহকেরাও সরাসরি তাদের পছন্দের প্রোডাক্ট জাস্টিফাই করে এবং কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। মনে রাখবেন এই ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একেবারে একটি বিপরীত কন্সেপ্ট। যেখানে পুরো মার্কেটিং পলিসিটাই থাকে পুরোপুরি ভিন্ন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কেনো?
প্রতিটি ঘটনারই কোনো না কোনো কারণ থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং যারা করেন তারা প্রত্যেকেউ কোনো না কোনো কারণকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে আগান। এসব কারণ হতে পারে সুবিবা সম্পর্কিত কিংবা সমস্যা সৃষ্টি হলেও দ্রুত সমাধান কালেক্ট করার টেকনিক সম্পর্কিত। এবার আমরা মার্কেটারেরা কেনো ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করে সে-সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেনো করে?
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো "সুবিধা"! ডিজিটাল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে মার্কেটারদের মাথায় সবচেয়ে বেশি কাজ করে এর সুবিধা ভোগ করা। এসব সুবিধার মাঝে সবচেয়ে মারাত্মক সুবিধাটি হলো ঘরে বা যেকোনো স্থানে বসেই এই মার্কেটিংয়ের কাজ করা যায়।
এছাড়াও কোনো ফিজিক্যাল শপ বা অফিসেরও প্রয়োজন পড়ে না। কাজটি পুরোপুরি অনলাইনের সাহায্য নিয়ে করা হয় বলে শ্রমিকের খরচটাও অনেক সময় সাশ্রয়ী হয়। এছাড়াও যাতায়াতসহ অন্যান্য অসুবিধাও নেই এই সেক্টরে। মূলত এসব কারণেই মার্কেটারেরা এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দিকে ঝুঁকে থাকে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কেনো করে?
সময়টা ডিজিটাল হলেও ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কিন্তু পিছিয়ে নেই। সফলতার প্রতি ঝোঁক, অন্যের দেখাদেখি এবং নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বা এই মার্কেটিং করার সবচেয়ে পজেটিভ পয়েন্ট হলো দ্রুত গ্রাহকের মনোযোগ পাওয়া যায়। যা সাধারণত অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ঘটে না। পাশাপাশি বিশ্বাসেরও একটি ব্যাপার আছে। তাছাড়া প্রফেশনাল দিক দিয়ে কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রতিটি স্টেপই গ্রাহকের মন জয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কিভাবে করে?
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং দুটোর ক্ষেত্রেই মার্কেটিং ক্যাটাগরির প্রসেস ফলো করলেও দুই সেক্টরের প্রসেস কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। কেনানা দুটো মার্কেটিংয়ের মিডিয়া কিন্তু একই নয়। যার কারণে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও ফলো করতে হয় ভিন্ন ভিন্ন টেকনিক। চলুন তবে এই পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কিভাবে করে সে-সম্পর্কে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করে?
যেকোনো মার্কেটিং কিংবা বিজনেস প্রজেক্ট শুরু করার আগে একটি সঠিক এবং স্পষ্ট প্ল্যানিং থাকা চাই। বিভিন্ন মার্কেটিং সিস্টেম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কিছু কমন পয়েন্টও থাকে। যা আমারা আজকের আলোচনার এই অংশটুকুতে তুলে ধরার চেষ্টা করবো৷
লক্ষ্য নির্ধারণ
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য খুঁজে নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে "শেষ পর্যায়ে গিয়ে আপনি কি চান!"
ভ্যালু বুঝুন
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে এর ভ্যালু বুঝতে হবে। সব বাদ দিয়ে প্রথমেই নিজের কাছে ভ্যালুটা কেমন সে-সম্পর্কে কিছুটা জাস্টিফাই করতে হবে। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বর্তমান অডিয়েন্স চাহিদা সম্পর্কেও রিসার্চ করতে হবে।
সেলস ফ্যানেল
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সেলস ফ্যানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা সাধারণত গ্রাহকের সাথে লাইফটাইম সম্পর্ক তৈরি করার প্রসেস বা টেকনিককে বোঝানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সফল মার্কেটারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন৷
গ্রাহক তৈরি
এবার আপনাকে গ্রাহক তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন গ্রাহক তৈরি না করে এই মাঠে নামলে গোল দেওয়া সম্ভাবনা একেবারেউ কম। সুতরাং ডিজিটাল মিডিয়াগুলির সাহায্য নিয়ে একটি স্ট্রং বায়ার কমিউনিটি বা অডিয়েন্স তৈরি করতে থাকুন।
কন্টেন্ট প্ল্যান
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যেহেতু ফিজিক্যাল কোনো সেলিং প্রসেস থাকে সেহেতু কন্টেন্টই একমাত্র ভরসা। এক্ষেত্রে ছবি, ভিডিও, টেক্সট এবং অডিও কন্টেন্টের সাহায্য নিতে হয়। আপনাকেও আপনার চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ক্যাটাগরির কন্টেন্ট প্ল্যানি এবং সেই কন্টেন্ট রেডি করে নিতে হবে।
রেজাল্ট চেক করুন
সবশেষে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মার্কেটিংয়ের রেজাল্ট চেক করতে হবে। দেখতে হবে টেকনিক ফলো করে আপনি কোনো সমস্যায় পড়েছেন কিনা, লস হয়েছে কিনা কিংবা লাভ হয়েছে কিনা! এই রেজাল্ট রিসার্চ করার ব্যাপারটি আপনাকে পরবর্তী প্রজেক্টে আরো অভিজ্ঞ মার্কেটার হতে সাহায্য করবে।
ট্রেডিশন্যাল মার্কেটিং কিভাবে করে?
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রেও প্রতিটি মার্কেটারকে কিছু কিছু স্টেপ ফলো করতে হয়। এসব স্টেপ সম্পর্কে জানতে নিচের পয়েন্টগুলিতে চোখ রাখুন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কালেক্ট করতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানি লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র!
বিলবোর্ড তৈরি
গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণে আপনাকে শুরুতেই বিলবোর্ডের সাহায্য নিতে হবে। আপনার বিজনেস এরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে প্রফেশনাল বিলবোর্ড টাঙানোর কাজটি সেরে ফেলুন।
অফলাইন পাবলিসিটি
এক্ষেত্রে আপনাকে প্রিন্ট এডের সাহায্য নিতে হবে। বিভিন্ন প্রিন্ট করা প্রমোশনাল কপি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে বিজনেস কার্ড তৈরি করতেও ভুলবেন না।
ইভেন্ট মার্কেটিং
এটি ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে৷ কোম্পানী এবং এর পণ্য সম্পর্কে গ্রাহককে জানাতে বিভিন্ন সেমিনার, কনভেনশন বা কনফারেন্স ইভেন্টের সাহায্য নিতে পারেন।
রেফারিং সিস্টেম
এক্ষেত্রে গ্রাহকদের ডিসকাউন্ট বা বিশেষ অফারের বিনিময়ে কোম্পানিতে তাদের বিভিন্ন পরিচিতজনদের কাছে নিজের প্রোডাক্টের প্রচারণা করতে পারেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের সুবিধা কি কি?
এবার আসি ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের সুবিধা এর ব্যাপারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
দ্রুত শেখা যায়
গ্রোবালি প্রচারণা করা যায়
খরচের পরিমাণ কম
কার্যকর টার্গেটিংয়ের সুযোগ
বিভিন্ন টেকনিক এপ্লাই করা যায়
বাড়তি স্টকের ঝামেলা নেই
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং
লোকাল অডিয়েন্স পাওয়া যায়
প্রমোশনাল ম্যাটারিয়াল ব্যবহার করা যায়
দ্রুত গ্রাহকের আস্থা পাওয়া যায়
প্রফেশনাল মার্কেটিং করার সুবিধা
লাইফটাইম গ্রাহক খুঁজে পাওয়া
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের অসুবিধা কি কি?
সুবিধা যেখানে আছে সেখানে কিছু না কিছু সমস্যা থাকবেই। ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের ব্যাপারেও ঠিক তেমন লজিকই প্রযোজ্য। ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের অসুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং
অনেক বেশি কম্পিটিশন
টেকনোলজির উপর ডিপেন্ডেড
যথেষ্ট সময়ের ব্যাপার
সিকিউরিটি ইস্যুজনিত সমস্যা
পপুলারিটি ধরে রাখা কঠিন
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং
খুব বেশি খরচের প্রয়োজন পড়ে
বাড়তি স্টাফ দরকার
প্রচুর ইনভেস্ট করতে হয়
যথেষ্ট সময়ের ব্যাপার
গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো কঠিন
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের উদাহরণ
যারা এখনো ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কন্সেপ্ট কিংবা পার্থক্য বুঝতে পারেননি তাদের জন্য মূলত আর্টিকেলের এই পার্টটি। এখানে আমি শেয়ার করবো ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের কিছু উদাহরণ। যা আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং কন্সেপ্ট বুঝতে সাহায্য করবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোম্পানি হবে পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক। এখানে ফেইসবুক পেইজ, ইন্সটাগ্রাম আইডি, ইউটিউব চ্যানেল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি হবে এক একটি দোকান। যা ব্যবহার করে গ্রাহক প্রোডাক্ট কিনবে এবং তা কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ডেলিভারি সার্ভিসের সাহায্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে।
ট্রেডিশনাল মার্কেটিং
এক্ষেত্রে সরাসরি মানে ফিজিক্যালি একটি শপ থাকবে। প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট স্টকে থাকতে হবে। প্রচার-প্রচারণা সবকিছুই চলবে অফলাইনে। গ্রাহক সরাসরি শপ বা অফিসে এসে প্রোডাক্ট পছন্দ করবে এবং কিনবে।
ইতি কথা
আশা করি ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেডিশনাল মার্কেটিং রিলেটেড সকল প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেলে তুলে ধরতে পেরেছি। এছাড়াও এ-সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। হ্যাপি মার্কেটিং!
ফ্যাক্ট সোর্স: Webfx, Indeed