ads

কুরবানি ঈদ ২০২৩ | ঈদ উল আযহা ২০২৩ বাংলাদেশ

সামনে আসছে কুরবানির ঈদ। যা প্রতিটি মুসলিমের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। এই গুরুত্বকে আরো কিছুটা বিস্তৃত করতে চলুন জেনে নেওয়া যাক কুরবানি ঈদ ২০২৩ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। আরবী ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসী বা উর্দুতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। পশু কুরবানীর মাধ্যমে মনের পশুকে কুরবানী করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ১০ ই জিলহজ্জ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ ই জিলহজ্জ সূর্যস্ত পর্যন্ত কুরবানী করা যায়। তবে প্রথম দিন করা উত্তম।


কুরবানি ঈদ ২০২৩ | ঈদ উল আযহা ২০২৩ বাংলাদেশ ঈদুল আযহা ২০২৩ বাংলাদেশ  কুরবানির ফজিলত আল কাউসার কুরবানীর ইতিহাস ও শিক্ষা কুরবানীর বিধান কুরবানির ইতিহাস ক.jpg


কুরবানি কি? 

আদম (আঃ) -এর পুত্র ক্বাবীল ও হাবীল -এর দেওয়া কুরবানী থেকেই করুবানির রীতি চালু হয়েছে। যা আজকের এই কুরবানি ঈদ ২০২৩ সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে আসা প্রত্যেক পাঠকই জানেন। 


মূলত কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫। 


কুরবানি কি ফরজ? 

মনে রাখবেন, কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব আসবাবপত্র হিসাবযোগ্য। 


সুতরাং কারও কাছে কুরবানির দিনগুলোতে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য ছাড়াও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো সম্পদ থাকলেই তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। তবে ফরজ নয়। যদিও ওয়াজিব মানেই ফরজের কাছাকাছি। 


অনেকেই মনে করে থাকেন কুরবানি এবং জাকাত উভয়ই ব্যাক্তির উপর একসাথে ফরজ হতে হবে। যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। কারণ জাকাত ও কুরবানি দুটো পৃথক পৃথক ইবাদত এবং উভয়ের ওয়াজিব হওয়ার কারণও ভিন্ন। একটি ফরজ না হয়ে থাকলে অপরটিও হয় না এমন ধারণা ঠিক নয়।।


কুরবানির ফজিলতগুলি কি কি? 

কুরবানির গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন কোরআন কারিমে এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই আমার কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার কাছে পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)। কোরআনে আল্লাহ আরও বলেন- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা হালাল পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা হজ : ৩৪)। 


আল্লাহতায়ালা কোরআনে আরও বলেছেন- ‘নিশ্চই আমার কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার কাছে পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)।


ইসলামে যেহেতু কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তাই কোরবানি সম্পর্কিত মাসআলা-মাসায়েল জেনে বিশুদ্ধভাবে কোরবানি করা জরুরি। অন্যান্য ইবাদতের মতো কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু নিয়ম ও বিধিবিধান। যা আপনাকে মানতেই হবে। 


কুরবানির মাসআলাগুলি কি কি? 

মনে রাখবেন, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক (সাবালক) মুসলিম যদি কোরবানি ঈদের তিন দিন (১০ জিলহজ সকাল থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত) এর মধ্যে সাহেবে নিসাব (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক) থাকেন বা হন, তাহলে তাকে কুরবানি দিতে হবে। কুরবানির ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলি সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতেই হবে: 


১. গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। যথা: ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট। এই ছয় প্রকার পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়, এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না।


২. কোরবানির পশু যেকোনো মুসলমান জবাই করতে পারেন। নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। দোয়া জানা জরুরি নয়। নিজে জবাই করতে না পারলে যেকোনো কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন।


৩. লেজের বা কানের বেশির ভাগ অংশ কাটা থাকা, অন্ধ বা এক চোখ কানা হওয়া, এক পা খুঁড়িয়ে চলা বা চলনশক্তিহীন হওয়া, উভয় শিং বা কোনো এক শিং মূল থেকে উত্পাটিত হওয়া পশু দ্বারা কুরবানি হবে না। 


৪. হালাল বন্য পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না; যদিও তা কেউ লালন-পালন করে থাকুক না কেন।


৫. কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বার এক বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয় তাহলে চলবে। উল্লিখিত পশুগুলো নর-মাদি যা-ই হোক না, তা দ্বারা কোরবানি হবে।


৬. গরু, মহিষ বা উটে অংশ হয়ে যেভাবে কোরবানি দেওয়া যায়; সেভাবে একটিকে সাতটি ধরে অংশ হারে আকিকাও করা যাবে। 


৭. কুরবানির মাংস ভাগ করার নিয়ম হলো তিন ভাগের এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া, তিন ভাগের এক ভাগ গরিব পাড়া-প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং তিন ভাগের এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা। আরও বেশি দিলে আরও ভালো। প্রয়োজনে সম্পূর্ণটা রেখে দিলেও ক্ষতি নেই।


৮. হিজড়ারা মূলত নারী বা পুরুষ, তাই তাঁদেরও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো কোরবানিও ওয়াজিব হবে।


৯. যারা মনে করেন, কোরবানির পশুর শিং বাড়ি বা ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখলে বাড়িঘর নিরাপদ থাকে, তারা ভুল জগতে আছেন। এমনটা করা যাবে না। 


১০. অ্যালার্জিজনিত কারণে, অ্যাজমার কারণে বা অনুরূপ অন্য কোনো কারণে কুরবানির মাংস খেতে না পারলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মনে রাখবেন, কোরবানির গোশত খাওয়া ও খাওয়ানো সুন্নত।  

Previous Post Next Post

{ads}