বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য | বেগম রোকেয়ার অবদান | বেগম রোকেয়া অনুচ্ছেদ
এক মহীয়সী নারীর নাম বেগম রোকেয়া। যিনি কিনা বাংলা সাহিত্য এবং বাংলাদেশের নারী জাগরণ ও মুক্তির দিশারী হিসেবে উপমহাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। অনেক সময় এই বেগম রোকেয়াকে ঘিরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং বিতর্কের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে বেগম রোকেয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তত্ব এবং উপস্থাপনা। সময়ের অভাবে অনেকেই হয়তো সকল তথ্য একসাথে জড়ো করতে পারেন না। এক্ষেত্রে আশা করি আমাদের আজকের এই বেগম রোকেয়ার সম্পর্কে ৫টি বাক্য ওই সম্পর্কিত নানা তথ্য দিয়ে সাজানো আর্টিকেলটি আপনাকে কিছুটা হলে উপকৃত করবে।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য
জন্ম তার ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে। বেঁচে ছিলেন ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২ সাল পর্যন্ত। দৈর্ঘ্যের হিসেবে জীবনটা অতটা বড় না হলেও তার অবদান বাংলার নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেশ লক্ষণীয়। চলুন আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য জেনে নেই। যা বেগম রোকেয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা যেমন বিতর্ক অনুষ্ঠান, অনুচ্ছেদ লেখা প্রতিযোগিতা, বেগম রোকেয়ার সম্পর্কিত বক্তৃতা উপস্থাপন ইত্যাদি কাজে সহজে ব্যবহার করা যাবে। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য: ১
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কবর উত্তর কলকাতার সোদপুরে অবস্থিত। কলকাতার এই সোদপুর তখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে তা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে আবিষ্কার করেন।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য: ২
সাবের পরিবারেন বড় কন্যা অর্থ্যাৎ বেগম রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা ছিলেন বিদ্যোৎসাহী, সাহিত্যানুরাগী শিক্ষালাভ, সাহিত্যচর্চা এবং সামগ্রিক মূল্যবোধ গঠনে আগ্রহী ছিলেন।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য: ৩
'নভপ্রভা' পত্রিকায় ছাপা হয় "পিপাসা" এর মাধ্যমে বেগম রোকেয়ার সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য: ৪
১৯০৫ সালের বেগম রোকেয়া প্রথমবারের মতো একটি ইংরেজি রচনা প্রকাশ করেন। এটির নাম হলো "সুলতানাজ ড্রিম বা সুলতানার স্বপ্ন"। যা সরাসরি মাদ্রাজ থেকে প্রকাশ করা হয়।
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য: ৫
বেগম রোকেয়ার বাড়িতে বা ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির উপর তৈরি হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। যেখানে বেগম রোকেয়ার বিভিন্ন স্মৃতি জড়িত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
বেগম রোকেয়ার জীবনী: একজন "রোকেয়া" হয়ে উঠবার গল্প
মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ গ্রামের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। বাবা জহীরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের নিজেই সেই সময় একাধারে আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হলেও দিনশেষে মেয়ে বেগম রোকেয়াকে শিক্ষার ব্যাপারে কোনোই সুযোগ প্রদান করেননি।
কিন্তু বেগম রোকেয়া তো দমে যাবার মতো মানুষ নন। জ্ঞানের তীব্র পিপাসা তাকে দিন দিন শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলছিলো। পরবর্তীতে তিনি তার বড় দুই ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহীম আবুল আসাদ সাবের ও খলিলুর রহমান আবু যায়গাম সাবেরের সাহায্যে শিক্ষা-গ্রহণের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করেন।
যে সময়টাতে মুসলমান মেয়েদের ঘরে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ ছিলো না সেই বয়সে বেগম রোকেয়া দ্বারে দ্বারে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। তার এই যুদ্ধকে অনেকেই হাসির কান্ড বলে মনে করলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসারে তার এই অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলো।
যাইহোক! বাবার বাড়িতে বড় ভাইবোনদের সাহায্যে তো কিছুটা শিখতে পারলেন। তবে তা পুরোপুরি নয়। বেগম রোকেয়ার শেখার আগ্রহ ছিলো আরো বেশি। এক্ষেত্রে বিহারের ভাগলপুর নিবাসী উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিবাহের মতো তার এই শিখণ-কার্যক্রম আরো প্রসার লাভ করে। স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের হাত ধরে তিনি ধীরে ধীরে সাহিত্য জগতে পা রাখলেন। পরিচিত হতে শুরু করলেন উপমহাদেশের বিভিন্ন বড় বড় সাহিত্যিকদের সাথে।
স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় রোকেয়া দেশি-বিদেশি লেখকদের রচনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। তাদের লেখাকে তিনি মনেপ্রাণে বোঝার চেষ্টা করেন। এসব লেখার জ্ঞান এবং তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সমাজ পরিবর্তনের রচনা তৈরি করবেন তা ভাবতে থাকেন। আজকের এই মহীয়সী বেগম রোকেয়া সেসময় সাহিত্য চর্চায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে রীতিমতো ঘাম ঝড়িয়েছেন। চেষ্টা করেছেন দিনকে দিন নিজের লেখাকে শ্রেষ্ট করে তুলবার।
১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন নারী আন্দোলনের অগ্রদূত, অদম্য শিখিয়ে এবং নারীদের আইডল এই বেগম রোকেয়া। মৃত্যুর পূর্বে তিনি প্রমাণ করে গেলেন যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধতে জানে। তিনি এটিও প্রমাণ করে গেলেন প্রতিটি নারীরই উচিত স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিপূর্ণ মানসিকতাকে কাজে লাগানো।
নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান
বেগম রোকেয়ার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বেশ একাকী বোধ করতে থাকেন। তবে মহৎ হৃদয়ের ব্যাক্তিদের একাকী বোধ করার কোনো সুযোগ নেই। সমাজ পরিবর্তনে তাদের করবার মতো অনেক কাজ রয়েছে। এই সময়টাকে বেগম রোকেয়া কাজে লাগিয়ে নারী শিক্ষার মুক্তির আন্দোলনকে আরো পাকাপোক্ত করে তোলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়ে জোগাড় করতে থাকেন। তাদের শিক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন এবং তিনি সফলও হোন।
তিনি আবার শিক্ষার প্রতিটি সেক্টরকে বেশ সম্মান করতেন। তাই তো তিনি তার স্কুলে একইসাথে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফারসি, হোম নার্সিং, ফার্স্ট এইড, রান্না, সেলাই, শরীরচর্চা, সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয়ই শেখানোর ব্যবস্থা করেন। তার স্কুলে আবার কোনো জাতিভেদ ছিলো না। তার স্কুলে একইসাথে ইংরেজ, বাঙালি, ব্রাহ্ম, খিস্টান সব শ্রেণীর মেয়েরাই কাঁধে কাঁধ রেখে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলো। তাও সেই সময়টাতে!
সাহিত্যিক হিসেবে একজন বেগম রোকেয়া
বেগম রোকেয়ার নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সাহিত্যের প্রতি বাড়তি ঝোঁক ছিলো। তবে নিজের মনের কথা লেখার পিপাসার চাইতে তার মাঝে নারী মুক্তির আন্দোলন এবং সমাজ পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিলো।
আর তার এই সাহিত্যিক মন-মানসিকতার কারণে আজ আমরা পেয়েছি মতিচূর (প্রবন্ধ, ২ খন্ড: ১ম খন্ড ১৯০৪, ২য় খন্ড ১৯২২), Sultana’s Dream (নকশাধর্মী রচনা, ১৯০৮), পদ্মরাগ (উপন্যাস, ১৯২৪), অবরোধবাসিনী (নকশাধর্মী গদ্যগ্রন্থ, ১৯৩১) এর মতো মানসম্মত সাহিত্য সামগ্রী।
ইতি কথা
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে ৫টি বাক্য এবং ও অন্যান্য তথ্য দ্বারা সাজানো আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। বেগম রোকেয়ার সম্পর্কে যদি আরো কোনো প্রশ্ন জানবার থাকে সে ক্ষেত্রে সরাসরি কমেন্ট বক্সের সাহায্য নিতে পারেন। বেগম রোকেয়ার মত মহীয়সী নারীরা বাংলা ইতিহাসের আজীবন বেঁচে থাকুক। এমনটা আশা রেখে আমরা আজকের এই আর্টিকেলের ইতি টানছি। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
বেগম রোকেয়ার কখন বিয়ে হয়?
বেগম রোকেয়া যখন ১৬ বছর বয়সী ছিলেন তখনই তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয় তার বয়স সেই সময় ছিল ৩৮ বছর। তার এই ৩৮ বছর বয়স্ক স্বামীর নাম ছিল সাখাওয়াত হোসেন। পরবর্তীতে তিনি তার স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে নিজের নাম রাখেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তাদের বয়সের মাঝে বিরাট ফারাক থাকলেও বেগম রোকেয়া পরবর্তীতে সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখেন। মোটামুটি স্বামীর অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যিকের সাথে পরিচিতি গড়ে তোলেন।
বেগম রোকেয়ার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি?
শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে বেগম রোকেয়ার কোনো গ্রন্থকেই প্রাধান্য দেওয়া যায় না। তার প্রত্যেকটি লেখাই ছিলো সমাজ পরিবর্তনের অমূল্য কপি। তবে সকলের মতে বেগম রোকেয়ার লেখা অবরোধবাসিনী শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। ভারতবর্ষের অগ্রণী নারীবাদী লেখিকার এই বই প্রকাশ প্রায় ১৯৩১ সালের দিকে।