৫টি সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: কোথায় যাচ্ছে ভবিষ্যত?
রোবট কি আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে?
হ্যাঁ বা না…এটি নির্ভর করে আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন তার উপর।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আমাদের জন্য একদিকে আশীর্বাদ! আবার অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ। রোবটকে কফি বানাতে দেখে আনন্দিত হলেও, আপনার জব হারানোর ভয়ও কিন্তু পিছু ছাড়বে না। তাহলে আসুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে ডুব দিই! জানি বিস্তারিত তথ্য। বোঝার চেষ্টা করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা-অসুবিধা এবং ভবিষ্যত।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কম্পিউটার বা মেশিন মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সহজ ভাষায়, এটি এমন এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করার মতো ক্ষমতা রাখে। বলে রাখা ভালো বিশ্বের প্রথম AI এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। মূলত সে-সময় "ডার্টমাউথ কনফারেন্স" নামের একটি কনফারেন্সে এই AI শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু উদাহরণ:
- গুগল ম্যাপ: যা ব্যবহার করে কোন রাস্তা জ্যাম মুক্ত তা জানতে পারবেন।
- চ্যাটজিপিটি: যেটি কিনা আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেবে।
- ফেসবুকের অ্যালগরিদম: যার সাহায্যে আপনার ফিডে আপনার প্রিয় পোস্টগুলোই শো করবে।
AI কতটা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে?
এবার আসি পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোর ঠিক কতটুকু বেড়েছে সে ব্যাপারে৷ গবেষণা বলছে, ২০২৪ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মার্কেট প্রাইজ ছাড়িয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI-কে বুঝতে হলে কিন্তু এর বৈশিষ্ট্যগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ। আসুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু কমন ফিচার বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নিই।
১. শেখার ক্ষমতা বা Machine Learning: AI কিন্তু নিজে নিজে শিখতে পারে। যেমন ধরুন নেটফ্লিক্সে আপনার দেখা মুভি দেখে এআই নিজেই আপনাকে নতুন নতুন মুভির সাজেশন দিতে পারবে।
২. ডেটা বিশ্লেষণ: AI অল্প সময়ে বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে দিতে পারে। এসব ডাটার উপর নিজেই রিসার্চ করে ভালো আউটপুট দিতে সক্ষম এআই৷
৩. স্বয়ংক্রিয় কাজ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা অটোমেটিক্যালি কাজ করতে সাহায্য করে। যেমন ধরুন উদাহরণ হিসাবে ফ্যাক্টরি রোবটের কথা বলা যেতে পারে৷
৪. চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: আজকাল কিন্তু AI বিভিন্ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রীতিমতো নতুন দিগন্তের সূচনা করছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার! চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা, ব্যবসা, গেমিং, এবং পরিবহন কোনো সেক্টরই বাদ পড়েনি। মোটকথা AI প্রযুক্তি আমাদের কাজকে আরও সহজ করেছে। আসুন তবে এক নজরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার জেনে নিই:
১. চিকিৎসা
একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন AI স্বাস্থ্য খাতকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিয়েছে। দ্রুত এবং নির্ভুল টেস্ট রেজাল্টের জন্য আজকাল বিভিন্ন মেশিন লার্নিং সিস্টেমের হেল্প নেওয়া হচ্ছে। যেমন ধরুন IBM Watson নামের AI প্রযুক্তি রীতিমতো ক্যান্সার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগীর ব্যাপারে এই প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে। এছাড়াও অত্যাধুনিক রোবট সার্জনের কথা বলা যেতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, AI ব্যবহার করে অপারেশনের ক্ষেত্রে কিন্তু সাফল্যের হার ৯৮%। যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য!
২. শিক্ষাক্ষেত্র
এবার আসি শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ব্যাপারে! AI শিক্ষার ক্ষেত্রেও আজকাল চমৎকার কাজ করছে। যা আগে কখনোই কল্পনাতেও মানুষ আনতে পারেনি। যেমন ধরুণ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম! যার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়ালি ক্লাস করতে পারছে। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান AI ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা বের করার চেষ্টা করছে। Duolingo-এর মতো অ্যাপ শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখার ক্ষেত্রে মানুষের মতোই হেল্প করছে।
৩. ব্যবসা-ক্ষেত্র
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবসা-ক্ষেত্র নিয়ে না বললেই নয়। কাস্টমারের এক্সপেরিয়েন্স কিংবা প্রোফিট বাড়ানো সবকিছুতেই আজকাল ভালোই পারফরম্যান্স দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কাস্টমারের কেনাকাটার অভ্যাস এবং পছন্দসহ সবকিছু নিয়ে আপনি চাইলে AI এর সাহায্যে চমৎকার রিসার্চ পেপার্স তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন। বিষয়টা এখন এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, Amazon এবং Flipkart-এর মতো প্ল্যাটফর্মও কিন্তু AI ব্যবহার করে বিজনেসে দ্বিগুণ প্রোফিট জেনারেট করতে পারছে।
৪. গেমিং
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরেক সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে গেমিং সেক্টরে! AI গেমের মধ্যে বট প্লেয়ারদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিয়ে রীতিমতো হিউম্যান কম্পিটিটরের অভাব পূরণ করছে। উদাহরণ হিসাবে PUBG গেইমের স্মার্ট বটের কথা বলা যেতে পারে৷ তাছাড়া এআই কিন্তু রিয়েল-টাইম রিয়েকশনও দিতে পারে।
সংক্ষেপে বলবো AI প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ব্যবহার মোটামুটি সব সেক্টরেই লক্ষ্য করতে পারবেন। এমন কোনো সেক্টর থাকবে না যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আপনি পাবেন না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা
কেবল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার জানাটাই এই যুগে এসে আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে আইডিয়া রাখা ছাড়াই যদি আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক বেশি হাইপে থাকি সেক্ষেত্রে দেখা যাবে হিতে-বিপরীত হচ্ছে! চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা
- দ্রুত এবং নির্ভুল কাজ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দ্রুত এবং নির্ভুল কাজ! AI কোন ভুল না করে অল্প সময়ে আপনাকে অনেক বেশি কাজ করে দিতে পারবে। উদাহরণ হিসাবে বিভিন্ন বড় বড় ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত AI রোবটের কথা বলা যায়। যারা কিনা প্রতি মিনিটে ১,০০০+ জিনিস প্যাকেজ করতে সক্ষম।
- মানুষের সময় বাঁচায়: টাস্ক অটোমেশন মানুষকে সময় বাঁচিয়ে অনেেক বেশি কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে আজকাল। যার কারণে ফ্যাক্টরিতে AI ব্যবহার করে মালিকেরা ইচ্ছেমতো কাজ সারিয়ে নিচ্ছে! তাও অনেক অল্প সময়ে। তাছাড়া সাইবার সিকিউরিটিতে AI এর ভূমিকাও লক্ষণীয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধা
- চাকরি হারানোর ঝুঁকি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো চাকরি হারানোর ঝুঁকি। কারণ এই যুগে এসে AI মানুষের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। রিসার্চ অনুসারে গত ২০২৩ সালে প্রায় ৩০% ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার চাকরি হারিয়েছে শুধুমাত্র এই এআইয়ের কারণে।
- ব্যয়বহুল প্রযুক্তি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরো একটি পয়েন্টেড অসুবিধা হলো এই প্রযুক্তি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। AI সেটআপ করতে গেলে যে টাকার খরচ পড়বে সে টাকা ম্যানেজ করার চাইতে মানুষের দিয়েই কাজ করিয়ে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
- ডেটা নিরাপত্তার ঝুঁকি: তাছাড়া এআই প্রযুক্তিতে ডেটা নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে। AI ডেটা হ্যাকিংয়ের শিকার হলে ইউজারসহ সম্পর্কিত সব সেক্টরেই যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়ে। তাছাড়া এক ধরণের নৈতিক প্রশ্ন থেকেই যায়, রোবট কি মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হবে! সবচাইতে বড় কথা… AI কখনো কখনো মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ইতি কথা
তবে সবশেষে বলবো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নিয়ে টেকনিক্যালি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারলে দেখবেন নিজেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে পেরেছেন।
তাছাড়া AI-এর মার্কেট প্রাইসও দেশে দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা বলছে ২০২৫ সালের মধ্যে এই মার্কেট প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। বিশেষ করে সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোই ফোকাস করবে এই মার্কেটের উপর!
যাইহোক! এবার আমরা জানতে চাই আপনার মতামত কি?
AI কি ভবিষ্যতে আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে?
নাকি আরও জটিল করে তুলবে?
প্রশ্নকারী: সুলতানা আফিয়া তাসনিম